Zoology Subject Review
প্রাণিবিদ্যা কি,একটি দারুণ প্রশ্ন ?
শুনেই তেলাপোকা কাটার কথা মনে পড়ছে? বা খাতা ভর্তি ছবি আকাঁ?
আসলে উচ্চ মাধ্যমিকের সিলেবাসে প্রাণিবিদ্যার একটা ভাগকেই বেশি ফোকাস করা হয়েছে, মূলতঃ মানবদেহ আর শারীরতত্ত্ব কে। এজন্য অনেকেই বিশেষ করে প্রাণিবিদ্যা পড়ার প্রতি নিরুৎসাহিত হয়। কিন্তু নিজেকে জানা, নিজের চারপাশের পরিবেশ-প্রতিবেশ কে জানা, সংরক্ষণ করার কথা বলা হয় যে বিষয়ে তা হলো প্রাণিবিদ্যা।
আসলে উচ্চ মাধ্যমিকের সিলেবাসে প্রাণিবিদ্যার একটা ভাগকেই বেশি ফোকাস করা হয়েছে, মূলতঃ মানবদেহ আর শারীরতত্ত্ব কে। এজন্য অনেকেই বিশেষ করে প্রাণিবিদ্যা পড়ার প্রতি নিরুৎসাহিত হয়। কিন্তু নিজেকে জানা, নিজের চারপাশের পরিবেশ-প্রতিবেশ কে জানা, সংরক্ষণ করার কথা বলা হয় যে বিষয়ে তা হলো প্রাণিবিদ্যা।
সমুদ্রের বিভিন্ন রকম প্রাণী নিয়ে নীল সমুদ্রে অবস্থানের মাধ্যমে গবেষণা করা, গহীন অরণ্য, বিভিন্ন বন্যপ্রানীর সন্ধ্যান করা, রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা, হাজার হাজার বর্ণিল প্রাণীদের জীবনধারণ সম্পর্কে জানা, মানুষ বা প্রাণীর রোগতত্ত্ব নিয়ে পড়ালেখা, প্রজাপতি, ফড়িং সহ বিভিন্ন পতঙ্গের জীবন যাপন, জীনতত্ত্ব বা জেনেটিক্স এ ভবিষ্যতে উচ্চ শিক্ষা, পাহাড়, জল, জঙ্গল, সমুদ্রে ছুটে বেড়ানো সহ বর্তমানে অনন্য এক বিভাগ প্রাণিবিদ্যা।
বিভাগের স্বল্পবিস্তর পরিচিতিঃ
কার্জনের হোয়াইট হাউসে নামে পরিচিত শহীদুল্লাহ্ হল পুকুর পারে ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সূচনা লগ্ন থেকে শিক্ষা ও গবেষণায় দেশ সেরা এই বিভাগ, আর বর্তমানে ঢাবির মানসম্পন্ন গবেষণামূখী বিভাগ গুলোর মধ্যে শীর্ষ স্থানীয়। বিভাগের বহু কৃতি অ্যালামনাই ছড়িয়ে আছেন সারা পৃথিবী জুড়ে।
পড়ালেখার পদ্ধতি:
ইয়ার সিস্টেম। চার বছরের অনার্স ও এক বছরের মাস্টার্স। সাধারণত কোন সেশন জট থাকে না ।
প্রতিবছর শিক্ষাবর্ষের শুরুতে ক্লাস শুরু হয়, এবং নিয়মিত ক্লাস হয়, সঠিক সময়ে নিয়ম মাফিক ইনকোর্স, ব্যবহারিক আর ফাইনাল পরীক্ষা।
নিয়মিত পড়ালেখা করলে পড়ালেখার তেমন কোন চাপ নেই। ইয়ার যত বৃদ্ধি পায় কোর্স ক্রেডিট তত বাড়ে। প্রথম বর্ষ থেকে ফোর্থ ইয়ার পর্যন্ত যথাক্রমে ২৬, ৩০, ৩৪ ও ৩৮ ক্রেডিট।
আমাদের আশেপাশে আছে বিচিত্র প্রাণী জগৎ, পরিবেশ প্রতিবেশ ব্যবস্থা, জীনতত্ত্ব, শ্রেণীবিন্যাস, প্রানীভূগোল, জীব-পরিসংখ্যান, শারীরতত্ত্ব, প্রাণী আচরণ, বিবর্তন, জীবাশ্ম বিদ্যা, জেনেটিক্স ইত্যাদি বিষয়ে চার বছর পাঠদান করা হয়।
মাস্টার্স এ ৫ টি পৃথক ব্রাঞ্চে সমান ভাগে শিক্ষার্থীরা বিভক্ত হয় ৫ টি বিষয়ের উপর (মৎস বিজ্ঞান , কীটতত্ত্ব, বন্যপ্রানী বিদ্যা, পরজীবি বিদ্যা, জেনেটিক্স ও মলিকুলার বায়োলজি) জ্ঞান লাভ করে।
মৎস্য বিজ্ঞান : মৎস্য সম্পদ, সমুদ্র বিজ্ঞান, সহ চমৎকার সব বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন। এছারা জলজ বিভিন্ন প্রাণী, পরিবেশ প্রতিবেশ, জলজ প্রাণীদের বংশগতি ইত্যাদি বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা।
কীটতত্ত্ব: বিভিন্ন পতঙ্গের উপর বিস্তৃত উচ্চ শিক্ষা। তাদের জীবনধারণ, রোগতত্ত্ব, অর্থনৈতিক গুরুত্ব, বংশগতি ইত্যাদি বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা।
বন্যপ্রাণী বিদ্যা : পুরো পৃথিবী হাজারো বন্যপ্রাণীতে পরিপূর্ণ (উভচর, সরীসৃপ, পাখি, স্তন্যপায়ী)। এই সকল প্রাণীদের জীবন, বাসস্থান, পরিবেশ প্রতিবেশ ব্যবস্থা, জীব বৈচিত্র সংরক্ষন, প্রাণীর আচরণ, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপানা, ইত্যাদি নিয়ে উচ্চ শিক্ষা।
পরজীবিবিদ্যা : বলতে গেলে একদিক দিয়ে মেডিকেলের বিকল্প। মানে মানুষ ও বিভিন্ন প্রানীর পরজীবি ঘটিত রোগ, রোগতত্ত্ব, ইত্যাদি বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা।
.
জেনেটিক্স ও মলিকুলার বায়োলজি : প্রানীদের জীনতত্ত্ব, বায়োইনফরমেট্রিক্স ইত্যাদি বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা।
স্নাতক / স্নাতকোত্তর শেষ করে চাকরির সুযোগ সুবিধা:
এক কথায় বলতে গেলে বিশ্বের বড় বড় রিসার্চ ইন্সটিটিউট থেকে শুরু করে বাংলাদেশর প্রত্যন্ত এলাকার স্কুল কলেজে চাকরির সুযোগ রয়েছে।
গবেষণা ক্ষেত্র:
বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ব বিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন রিসার্চ ইন্সটিটিউটে চাকরি, দেশে পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র, বিসিএসআইআর, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, আইসিডিডিআরবি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা, বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল সংস্থাতে, দেশি বিভিন্ন এনজিওতে ভালো পদে চাকরির সুযোগ।
CSIR, NIPSOM, IEDCR, AIPH, ICDDR, BIRDEM ও অন্যান্য দেশী-বিদেশী গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের সুযোগ।
এছাড়াও বিভিন্ন বিদেশি NGO ,ICZN,ICBN এমন নামকরা প্রতিষ্ঠানে সুযোগ আছে চাকরি করার ।
বর্তমানে পুরো পৃথিবীতে জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, ব্লু ইকোনমি, খাদ্য নিরাপত্তা, মহামারী প্রতিরোধ, মলিকুলার বায়োলজি চাকরির বাজারে খুবই প্রাধান্য পাচ্ছে। আর বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম জীব বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ একটি দেশ। এজন্য এই সকল সেক্টরে দেশে বিদেশে চাকরির বাজার বিস্তৃত হচ্ছে খুব দ্রুত।
অনন্য চাকরি: বিসিএস, ব্যাংক জব বা অন্যান্য সেক্টরে অনেক ভালো সাফল্য গাঁথা আছে বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের। এছাড়া বিভিন্ন স্কুল কলেজে রয়েছে চাকরির সুযোগ।
আমাদের বিভাগ থেকে প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী সরকারি চাকরি করে থাকে ।
সব মিলে এই বিষয় থেকে দেশে বিদেশে রয়েছে চাকরির ক্ষেত্র। পাশ করে কেউ বসে থাকে না।
এছাড়া BCS এ আমাদের বিভাগের জন্য কিছু নির্দিষ্ট seat শিক্ষা ক্যাডার এ বরাদ্দ থাকে ।
সহশিক্ষা কার্যক্রম:
ঢাকা ইউনিভার্সিটি নেচার কনজারভেশন ক্লাব নামের ক্লাবটি প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিচালিত।
প্রকৃতি সংরক্ষণে বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ক্লাবটি। বিভাগের শিক্ষার্থীরা এই ক্লাবের সদস্য হতে পারে। বর্তমানে জাতীয় পর্যায়ে, আন্ত: বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় ক্লাবটির সদস্যরা প্রথমস্থান অধিকার সহ বিভিন্ন পুরস্কার লাভ করে বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করছে। এছাড়া নিয়মিত ভাবে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস, ব্যাঙ সংরক্ষণ দিবস, বন্যপ্রানী দিবস, জলাভূমি দিবস, পরিবেশ দিবস সহ বিভিন্ন আয়োজন করে থাকে ক্লাবটি।
এছাড়া শিক্ষার্থীরা ফটোগ্রাফি, বিতর্ক সহ বিভিন্ন সংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত।
বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের কোর্স ভিত্তিক tour আয়োজন করা হয়, আর প্রতি year এ তো একটা tour থাকছেই , পাশাপাশি ৩য় ও ৪র্থ বর্ষে সাধারণত সুন্দরবন, সেন্টমার্টিন,কক্সবাজার এ ভ্রমণের সুযোগ ।
প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক- ছাত্র সম্পর্ক অনেক বেশি সৌহার্দ্যপূর্ণ। বিভাগের শিক্ষকগন, পড়ালেখা, গবেষণার পাশাপাশি সকল ক্ষেত্রে অনেক বেশি আন্তরিক। বিভাগের শিক্ষক দের প্রত্যেকেই নিজ নিজ গবেষণা ক্ষেত্রে সফলতার স্বাক্ষর রাখছেন। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সনামধন্য জার্ণালে প্রকাশিত হচ্ছে তাদের গবেষণা পত্র।
বাংলাদেশের প্রাণিবিদ্যার এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে খ্যাতনামা মানুষ গুলো এই বিভাগেরি শিক্ষক বা অ্যালামনাই।
পাশাপাশি বিভাগের সিনিয়র-জুনিয়র সম্পর্ক ভাতৃত্ব পূর্ণ। যে কোন সমস্যায়, সুখে-দুঃখে সবসময় পাশে থাকেন গাইড করেন, পরামর্শ দেন।
চার বছরে সুন্দরবন, বান্দরবান, কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন বনাঞ্চলে শিক্ষা সফর হয় নিয়মিত আর স্থানীয় শিক্ষা সফর তো আছেই। রয়েছে বিভিন্ন রিসার্চ সেন্টারে গবেষনা কার্যক্রম পরিদর্শনের সুযোগ। এছাড়া বিভাগে নিয়মিত আয়োজিত হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের।
সবকিছু মিলে ৫ বছর অনেক সুন্দর ভাবে যায় প্রাণিবিদ্যা বিভাগ। এখন প্রশ্ন হলো বিষয়টিকে যে যেভাবে নিবে। যারা শিক্ষা ও গবেষণার কিছু করার চেষ্টা করছে, তারা সফল হয়েছে। পরিশ্রম, মেধা, ধৈর্য্য আর একাগ্রতা দিয়ে সব কিছুই জয় করা সম্ভব।
স্নাতক পর্যায়ে থিসিস না থাকলেও, এবারে এসে ফলাফলের উপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীরা সুযোগ পাবে নিজেদের পছন্দের বিষয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে থিসিস করার, যা তাদের প্রাণিবিদ হয়ে উঠার পথে একটা বড় পদক্ষেপ।
যারা থিসিস করবে না, তাদের জন্যও প্যারা নাই। ল্যাব ক্লাসের মাধ্যমে তারা নিজেদের ঝালাই করে নেয়ার সুযোগ পাবে।
0 Comments